বিভিন্ন স্থানে পূজা মণ্ডপে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে অভিনব থিম পূজার আয়োজন করা হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা পাঁচবাড়ি পূজামণ্ডপে। দেবী-দর্শন, পূজা-অর্চনা, দেবীর পায়ে ভক্তদের অঞ্জলি, প্রসাদ গ্রহণ ও আরতির আনন্দ জোয়ারে সবাই ভাসলেও চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা এলাকার পাঁচবাড়ির সার্বজনীন পূজামণ্ডপে এসে থমকে দাঁড়াবে যে কেউ। ঢাকের বাদ্য, কাঁসর ঘণ্টা, মন্ত্র, শঙ্খধ্বনি নিয়েও ব্যতিক্রমী সাজে সেজেছে চট্টগ্রামে দুর্গাপূজার এই মণ্ডপটি।
কেউ ছিন্ন বস্ত্রে, কেউ নিঃস্ব-অসহায় হয়ে ধ্যানমগ্ন ‘মা’ দুর্গার সামনে বসে প্রার্থনার ভঙ্গিতে অন্যায়ের প্রতিকার চাইছেন, চাইছেন প্রাণ নিয়ে শান্তিতে বসবাসের পরিবেশ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা, নির্যাতন নিয়ে প্রকাশিত সংবাদকে ভিত্তি করে এবার পূজায় এই ‘থিম’ তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাথরঘাটা পাঁচবাড়ি পূজামণ্ডপ কমিটির সভাপতি সুরজিৎ চৌধুরী। তিনি বলেন, “এসব হামলার বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে আমরা এবারের পূজামণ্ডপকে সাজিয়েছি। সাম্প্রদায়িকতাকে যারা লালন করেন, বিনষ্ট করেন সেই অসুরদের ‘মা দুর্গা’ যেন এবার বধ করেন সেই প্রার্থনা করেছি মহাসপ্তমীতে।”
পাথরঘাটা এলাকার পাঁচবাড়ির মতো ভিন্ন আঙ্গিকে চিন্তা করেছে চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা এলাকার হাজারী লেইন সার্বজনীন পূজামণ্ডপের কর্তাব্যক্তিরাও।
যুদ্ধ-সহিংসতায় বিপন্ন মানবতাকে ‘থিম’ করেছে নগরীর অন্যতম বৃহৎ এই পূজামণ্ডপ। উত্তাল সমুদ্রে ডুবন্ত মানুষরা প্রাণ বাঁচাতে দুর্গাকে ডাকছে, আর ‘মা’ দুর্গা তাদের বাঁচাতে মর্ত্যে যাচ্ছেন – এভাবে সাজানো হয়েছে মণ্ডপটি।
এ পূজা কমিটির সভাপতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বলেন, “মানব পাচারকারী আর যুদ্ধবাজরা মিলে আজকের পৃথিবীতে মানবতাকে বিপন্ন করে তুলেছে। ফলে হাজার হাজার মানুষ তাদের ফাঁদে পড়ে সাগরে ডুবে মরছে। এসব মানবপাচারকারী ও যুদ্ধবাজরা আজকের যুগের অসুর। তাদের বিনাশ না হলে পৃথিবীতে মানবতা হারিয়ে যাবে। তাই মার কাছে এ অসুরদের বিনাশই প্রার্থনা আমাদের।”
এছাড়া বন্দর নগরীর পাথরঘাটা সার্বজনীন পূজা কমিটি, সতীশ বাবু লেইন, গোসাইলডাঙ্গা সার্বজনীন পূজা মণ্ডপগুলোও সেজেছে নানা থিমের উপর ভর করে।
প্রতিটি মণ্ডপেই ‘দুর্গতিনাশিনী দুর্গার’ আরাধনা ছাড়াও মানুষের অসুর প্রবৃত্তির বিনাশকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
পূজার নিরাপত্তা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ।