জঙ্গি দমন অভিযানের জন্য আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারকে শুক্রবার গভীর রাতে ঢাকায় তার শ্বশুরবাড়ি থেকে পুলিশ ‘নিয়ে গেছে’; যা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে স্বজনদের মধ্যে।
অবশ্য বাবুল আক্তারকে ডাকলে নিজেই যেতে পারতেন, তাকে এতো রাতে কেন গাড়ি পাঠিয়ে আনা হলো বিষয়টি নিয়ে বেশ চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।
ঢাকায় পুলিশ সদরদপ্তরে সংযুক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে গত ৫ মে চট্টগ্রামে তাদের বাসার কাছে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়।
চট্টগ্রামের পুলিশ বলে আসছিল, গত দুই বছরে চট্টগ্রামে জঙ্গি দমন অভিযানে বাবুলের ভূমিকার কারণে জঙ্গিদেরই সন্দেহের তালিকায় প্রথমে রেখেছেন তারা; সেভাবেই মিতু হত্যার তদন্ত করছেন তারা।
বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বলছেন, শুক্রবার রাত ১টার দিকে তাদের বনশ্রীর বাসা থেকে বাবুল আক্তারকে নিয়ে যায় খিলগাঁও থানার ওসি মঈনুল হোসেন ও মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনার আনোয়ার হোসেন।
আইজি সাহেব দেখা করতে বলেছেন বলে ওকে নিয়ে গেল। এরপর তার সাথে আর যোগাযোগ করতে পারছি না। যারা নিয়ে গেল তাদের সাথেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
স্ত্রী খুন হওয়ার পর থেকে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় শ্বশুর বাড়িতেই থাকছিলেন এসপি বাবুল আক্তার। তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন অবসরে গিয়েছিলেন পুলিশের ওসি হিসেবে। আর বাবা আবদুল ওয়াদদু মিয়াও চাকরি করেছেন পুলিশে।
মিতু হত্যার ঘটনায় চট্টগ্রামে যে মামলা হয়েছে, বাবুল আক্তারই তার বাদী। সে কারণে প্রায়ই তাকে নিজের দায়িত্বের বাইরেও পুলিশের কার্যালয়ে যেতে হত বলে মোশাররফ হোসেন জানান।
তিনি বলেন, “আগেও ও রাতে গেছে। কিন্তু যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে এমন হয়নি। এ কারণে আমাদের সন্দেহ হচ্ছে। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিচ্ছে না কেন? ফোন বাজছে, ধরছে না কেন? বাসায় দুই বাচ্চা কাঁদছে, মা তো আর নেই।
এ বিষয়ে কথা বলতে খিলগাঁওয়ের ওসি এবং মতিঝিলের উপ কমিশনারকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তারা ধরেননি।
বাবুল আক্তারকে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে রাখা হয়েছে বলে শোনা গেলেও এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না পুলিশের কোনো কর্মকর্তা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) মাসুদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
খিলগাঁও থানার ডিউটি অফিসার আব্দুল কাদের বলেন, ‘এটা আমাদের নলেজে নেই।ডিবির কোনো টিম অভিযান চালালে সেটা তো আমাদের নলেজে থাকে না।’
এদিকে রামপুরা থানার ওসি (তদন্ত) সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমিও শুনেছি। তবে নিশ্চিত নই।’
এদিকে মিতু হত্যায় সরাসরি জড়িত সন্দেহে আবু মুছা (৪৫) ও এহতেশামুল হক ভোলা (৩৮) নামে দুই ব্যক্তিকে ইতোমধ্যেই আটক করেছে পুলিশের একটি ইউনিট। এরা দু’জনই এসপি বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। ধারণা করা হচ্ছে, তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভাড়াটে খুনি হিসেবে তারা মিতুকে হত্যা করেছে অথবা সাহায্য করেছে। তাছাড়া মিতু হত্যায় যে অস্ত্রটি ব্যবহার হয়েছে, সেটি নাকি বাবুল আক্তরের সোর্স বিভিন্ন সময় ভাড়া দিতো।
এর মধ্যে আবু মুছা দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। অনেক সময় ভাড়াটে খুনি হিসেবেও কাজ করেন। এসপি বাবুল আক্তারের হাতে একবার গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন তিনি। অন্যদিকে ভোলাও একজন সন্ত্রাসী ছিলেন। এখন তিনি ৩৫ নম্বর বকশিরহাট ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক মামলা। বেশ কিছুদিন ধরে দু’জনই বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে কাজ করছেন। আর এসব বিষয় নিয়েই ডিবি পুলিশ বাবুল আক্তারের সঙ্গে কথা বলবে বলেই জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ জুন নগরীর জিইসি’র মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত ও গুলিতে খুন হন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনার পরদিন পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তার বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে গোয়েন্দা পুলিশ, র্যাব, সিআইডি, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিআই)। তবে মামলার মূল তদন্তে আছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। যদিও সবগুলো সংস্থা মিলে এখন পর্যন্ত এ ঘটনার তেমন কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি।
o মিতু হত্যায় ‘জড়িত’ এসপি বাবুল আক্তারের সোর্স