শিশু নিপীড়ন, যৌন নিপীড়ন এবং পারিবারিক সহিংসতা এগুলো কোনো অনিবার্য অপরাধ নয়। এগুলো সব ভয়ানক কর্মকাণ্ড যার সঙ্গে যুক্ত থাকে ক্ষতিকর মনোভাব। আর অজ্ঞতা এবং অবিশ্বাসের মধ্য দিয়ে এসব কর্মকাণ্ড অব্যাহতভাবে চলতে দেওয়া হয়। এসব এমন অপরাধ যা কোনো ভিকটিমকে পুরো জীবনভর তাড়িয়ে বেড়ায়।
কিন্তু আমার সংসদীয় আসন রদারহ্যাম এর শিশু যৌন নিপীড়নের কেলেঙ্কারিগুলো থেকে যে শিক্ষাটি পেয়েছি তা হলো এসব অপরাধের সবগুলোই প্রতিরোধযোগ্য। ২০১৪ সালে একটি স্কুল পরদির্শনে গিয়ে একদল কিশোরীর কথপোকথন শুনে আমি তাজ্জব বনে যাই। যা আজও আমাকে শিহরিত করে।
কিশোরীদের দলটি তাদের পড়াশোনা, পরিবার এবং পোশাক ও গান নিয়ে তাদের পছন্দ সহ জীবনের সকল বিষয়ে কথা বলছিল। কিন্তু যখনই তারা ছেলেদের নিয়ে কথা বলা শুরু করে আমি তাদের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যাই।
এক কিশোরী সবে মাত্র তার ছেলে বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে। দুই বছর ধরে শারীরিক, মৌখিক এবং আবেগগতভাবে নিপীড়নের শিকার হওয়ার পর সে তার ছেলে বন্ধুকে ত্যাগ করেছে।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি তাকে ত্যাগ করলে কেন?” উত্তরে সে বলেছে, “সে আমার পেটে ছুরিকাঘাত করেছে। আমি ভেবেছিলাম ছুরিটি হয়তো বহুদূর পর্যন্ত প্রবেশ করেছে।”
আমি এরপর তার বন্ধুদের দিকে ভয় নিয়ে তাকালাম। কিন্তু তাদের কারো চেহারাতেই কোনো বেদনা নেই। তারা শুধু কাঁধ ঝাঁকিয়ে বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে নেয়। তাদের বাস্তবতায় এভাবেই তাদের কিশোর প্রেমিকরা তাদের সঙ্গে আচরণ করে। আর এটা অনেকটা অনিবার্য একটা বিষয় এবং তা সহ্য করেই তাদের বেঁচে থাকতে হয়।
এই মেয়েরা নিজে নিজেই এই উপসংহারে আসেনি। তারা শিখেছে যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সহিংসতা একটা স্বাভাবিক বিষয়। আর তারা তাদের ছেলে বন্ধুর পক্ষেই আছে।
ছেলেরাও এটা শিখছে। অন্য একটি বিদ্যালয়ে যাওয়ার পর এক কিশোর আমাকে সরল মনেই জিজ্ঞেস করল যৌন মিলনের সময় মেয়ে বন্ধুকে টুটি চেপে ধরাটা জরুরি কিনা। আর অনলাইনে পর্ন ছবিতে সে এটাই দেখেছে।
মিডলসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের অর্ধেকই অনলাইনে পর্ন ছবি দেখে। আর ১৪ বছর বয়সের মধ্যে শিশুদের প্রায় সকলেই (৯৪%) পর্ন ছবি দেখে ফেলে।
আর সবচেয়ে মারাত্মক বিষয়টি হলো তরুণদের যারা পর্ন দেখেছে তাদের বেশিরভাগ পর্নকেই যৌনতার বাস্তব চিত্রায়ন বলে মেনে নিয়েছে। আর অল্প বয়সী ছেলেরা বলেছে তারা পর্ন ছবিতে যা দেখে তার নকল করতে চায়।
এই শিশুদেরকে যদি নারী পুরুষের সম্পর্ক এবং যৌনতার স্বাভাবিকতা বিষয়ক শিক্ষা না দেওয়া হয় তাহলে এরা পথভ্রষ্ট হবে। তাদেরকে যদি এই শিক্ষা না দেওয়া হয় যে তারা পর্ন ছবিতে যা দেখছে তা বাস্তব সম্মত নয় তাহলে তারা পর্নকেই কীভাবে যৌন মিলন করতে হবে সে সম্পর্কিত শিক্ষা বলে মনে করবে। তারা এমন এক শিল্প থেকে যৌন শিক্ষা গ্রহণ করবে যা নারীদের প্রতি সহিংসতাকেই স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে চিত্রায়িত করে।
আমার সংসদীয় আসনের কিশোর-কিশোরী, দাতব্য সংগঠন, প্রাতিষ্ঠানিক বিশেষজ্ঞ, নিপীড়নের পর বেঁচে যাওয়ারা এবং পেশাদরদের সঙ্গে কথপোকথন শেষে আমি আজ আমার ডেয়ার টু কেয়ার ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান এর যাত্রা শুরু করেছি। এর মূল লক্ষ্য হলো কিশোরবয়সী সম্পর্কে শিশু নিপীড়ন এবং সহিংসতা প্রতিরোধ করা।
শিশুদেরকে যত অল্প বয়সে সম্ভব স্বাভাবিক যৌনতা এবং সম্পর্ক বিষয়ক শিক্ষা সরবরাহ করবে। তাহলেই তারা সম্মতি বলতে কী বুঝায় আর ‘না’ মানে যে ‘না’ তা বুঝতে শিখবে। এ থেকে তারা নিজেকে এবং অন্যকেও সম্মান করতে শিখবে।
ভালো সম্পর্ক বিষয়ক শিক্ষার আছে একটি প্রতিরক্ষামূলক কার্যকারিতা। আর যে তরুণরা অল্প বয়সেই সুস্থ যৌন শিক্ষা লাভ করে তারা জীবনে প্রথমবার যৌন মিলন করেন অনেক পরিপক্ক বয়সে গিয়ে। এবং এরা যৌন মিলনের সময় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করেই যৌন মিলন করেন। এরা খুব কমই অপরিকল্পিত গর্ভধারণ করেন এবং নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন মিলন করেন না।
আমারা যদি আমাদের সমাজকে অর্থপূর্ণভাবে বদলাতে চাই তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের শিশুদেরকে নিপীড়নমূলক আচরণ থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার শিক্ষাটি দিতে হবে। এটা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। অথচ এই দায়িত্ব পালনে আমরা এখন পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছি।
– দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত ব্রিটিশ এমপি সারাহ চ্যাম্পিয়ন এর নিবন্ধ অবলম্বনে