আয়কর রিটার্ন দাখিলের তথ্য যাচাই সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন কয়েক লাখ সরকারি চাকরিজীবী।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ সময়ের মাত্র ছয় দিন আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
৩০ নভেম্বর আয়কর রিটার্নের শেষ দিন।
গত ২৪ নভেম্বর এনবিআর থেকে সরকারি, আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের তথ্য যাচাই সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি হয়েছে।
মহাহিসাব নিয়ন্ত্রককে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, কর আইনের বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের কোনো মাসে সরকারি, আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মচারীর মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা বা তার বেশি হলে কর্মচারীর জন্য ২০১৬-১৭ কর বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক। ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারাদের ২০১৬-১৭ কর বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর।
এতে বলা হয়েছে, “২০১৫ সালে ঘোষিত বিভিন্ন চাকরি (বেতন ও ভাতাদি) আদেশে আয়করের আওতাভুক্ত সব সদস্য/কর্মচারী বাধ্যতামূলকভাবে আয়কর আইনের বিধান মোতাবেক নিজের বেতন খাতের আয়সহ মোট আয় নিরূপণ ও নিজস্ব আয় থেকে আয়কর পরিশোধপূর্বক যথাসময়ে আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন বলে বিধান সন্নিবেশিত রয়েছে।”
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, “আইনের যথাযথ পরিপালন ও রাজস্ব আহরণের স্বার্থে বেতন-ভাতাদি পরিশোধের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কর আইন ও ২০১৫ সালে ঘোষিত বিভিন্ন চাকরি (বেতন ও ভাতাদি) আদেশের আয়কর রিটার্ন দাখিলবিষয়ক বিধানের শর্ত পরিপালিত হয়েছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া আবশ্যক। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের কোনো মাসে সরকারি, আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মচারীর মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা বা তার বেশি হলে উক্ত কর্মচারীর ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত প্রতি মাসের বেতন বিলের সঙ্গে কর্মচারীর টিআইএন, ২০১৬-১৭ কর বছরের আয়কর রিটার্নের প্রাপ্তি স্বীকারপত্রের ক্রমিক নম্বর ও রিটার্ন দাখিলের তারিখের তথ্য সংযুক্ত করতে হবে। বর্ণিত কর্মচারীর মধ্যে কেউ ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল না করে সময়ের আবেদন করে থাকলে বিলম্বে রিটার্ন দাখিলের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপ কর কমিশনারের অনুমোদনের ক্রমিক নম্বর, তারিখ, সার্কেল নম্বর ও কর অঞ্চলের নামের তথ্য বেতন বিলের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। বর্ণিত তথ্যসমূহ বেতন বিলের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে কি না তা, বেতন বিল পাস/বেতন পরিশোধের ক্ষেত্রে অনুমোদনকারী/পরিশোধকারী ব্যক্তি/কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা করে দেখবেন।”
এনবিআরের এ নির্দেশনায় খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কার্যালয়ের কর্মচারীরাও সমস্যায় পড়েছেন। তারা জানিয়েছেন, নতুন এ নির্দেশনার কারণে বিপুলসংখ্যক তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা সমস্যায় পড়বে। আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার মাত্র আর কয়েক দিন বাকি। এ ছাড়া বিপুলসংখ্যক কর্মচারী এনবিআরের নতুন নির্দেশনা সম্পর্কে এখনো অবহিত হয়নি। যারা এ নির্দেশনা মেনে রিটার্ন দাখিল করতে সক্ষম হবেন না- তাদের বেতন-ভাতাদি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে তারা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থমন্ত্রীর দপ্তরের একজন কর্মচারী বলেছেন, ‘যাদের বেসিক বেতন ১৬ হাজার টাকা অতিক্রম করেছে কিন্তু ব্যক্তিশ্রেণি করমুক্ত আয়সীমা অর্থাৎ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা অতিক্রম করেনি তাদেরকেও রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এটা আমাদের জানা ছিল না। হঠাৎ করে রিটার্ন দাখিলের নির্দেশনা আসায় বিপাকে পড়েছি। আমি জানতাম যেহেতু আমার ব্যক্তিশ্রেণি করমুক্ত আয়সীমা অতিক্রম করেনি তাই আমার রিটার্ন দাখিলের প্রয়োজন হবে না। এখন এনবিআরের নির্দেশনার মাধ্যমে জানতে পারলাম নতুন নিয়ম অনুযায়ী ব্যক্তিশ্রেণি করমুক্ত আয়সীমা অতিক্রম না করলেও আমাকে রিটার্ন দাখিল করতে হবে।’
উল্লেখ, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছর বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণি করমুক্ত আয়সীমা পুরুষদের জন্য ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং নারীদের জন্য ৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, নতুন নিয়ম অনুযায়ী যারা রিটার্ন জমা দেবেন না তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে যারা রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় চেয়ে আবেদন করবেন তাদের বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে।