সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের সামনে থেকে ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেওয়ায় খুশি হলেও সেটি আরেক জায়গায় পুনঃস্থাপনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হেফাজত আমির শাহ আহমদ শফী।
ভাস্কর্যটি পুনঃস্থাপনকে ‘জাতির ধর্মীয় বিশ্বাস ও আবেগের সাথে তামাশা’ বলে মন্তব্য করেছেন কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির প্রধান।
সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের সামনে থেকে ভাস্কর্যটি অপসারণের পরদিন শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে শুকরিয়া মিছিল করে ইসলামী দলগুলো।
তার একদিন বাদে রোববার এক বিবৃতিতে হেফাজত আমির বলেন, “দেশবাসী যখন পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখনই জানা গেল সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে মূর্তি পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। এমন সংবাদে সমগ্র দেশবাসীর সঙ্গে আমরা বিস্মিত, হতবাক ও বাকরুদ্ধ।”
ওই ভাস্কর্য দেশ থেকে চিরতরে অপসারণের দাবি জানিয়ে শফী বলেন, “আমরা বলেছিলাম গ্রিক দেবীর এই প্রতীককে চিরতরে পরিত্যাগ করতে হবে। এই ভাস্কর্য, যা জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্থাপিত হয়েছিল, তাকে বাংলাদেশের কোথাও স্থান দেওয়া যাবে না।
“অথচ আমাদের সকল আবেদন-নিবেদন এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভাস্কর্য পুনঃস্থাপন প্রমাণ করে, এদেশের মানুষের সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষাকে সরকার বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দিচ্ছে না।”
গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে রোমান যুগের ন্যায়বিচারের প্রতীক ‘লেডি জাস্টিস’ এর আদলে একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হলে হেফাজতসহ কয়েকটি ইসলামী সংগঠন এর বিরোধিতায় নামে।
ওই ভাস্কর্য অপসারণ করা না হলে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের ঘটনার মতো আবারও ঢাকা অচল করে দেওয়ার হুমকি দেয় তারা। এরপর গত ১১ এপ্রিল হেফাজতের আমির শফী নেতৃত্বাধীন একদল ওলামার সঙ্গে গণভবনে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাস্কর্যটি সরাতে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের সামনে থেকে ভাস্কর্যটি অপসারণ করা হয়। একে মৌলবাদী শক্তির কাছে ‘নির্লজ্জ আত্মসমর্পণ’ আখ্যায়িত করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ছাত্র সংগঠন। দেশের শীর্ষস্থানীয় লেখক, অধ্যাপক, শিল্পী, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতি কর্মীরাও এর সমালোচনায় মুখর হয়েছেন।
এর মধ্য দিয়ে মৌলবাদী শক্তি আরও সংহত এবং তারা রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে চাপ তৈরি করবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
এই শঙ্কা জানানোর দুই দিনের মাথায় ভাস্কর্যটি পুনঃস্থাপনের প্রতিবাদ জানিয়ে হেফাজতের পাঠানো বিবৃতিতে ‘বাস্তবতা বুঝে’ সিদ্ধান্ত নিতে সরকার ও সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
ভাস্কর্য অপসারণে ক্ষোভ-বিক্ষোভ এবং সেটি আগের জায়গায় পুনঃস্থাপনের দাবিতে নানা কর্মসূচির মধ্যে শনিবার রাতে সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে ভাস্কর্যটি বসানো হয়।
এখন হেফাজত আমির শফী বলছেন, “ভাস্কর্য অপসারণে ‘মধ্যপন্থা’ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি সামনে না পেছনে থাকবে, সেটি ইস্যু ছিল না। ইস্যু ছিল এটি থাকা না থাকা। ইসলামে ইনসাফ বা ন্যায়ের ধারণা একটি মৌলিক ধারণা। ইনসাফ কায়েম ছিল বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষিত লক্ষ্যও। নাগরিকদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও আমাদের জাতীয় চেতনা ও ঐতিহ্য নিয়ে তামাশা বন্ধ করে ভাস্কর্য (গ্রিক দেবী থেমিসের মূর্তি) চিরতরে দেশ থেকে অপসারণ করতে হবে।”