আরমান হোসেন টুটুল, বিশেষ প্রতিনিধি।
জলবায়ু পরিবর্তন রোধে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তি কার্যকর করতে একমত হয়েছে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এ চুক্তিকে সমর্থন দিয়েছে আরেক শক্তিশালী দেশ রাশিয়া। বৃহস্পতিবার এ চুক্তির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানানোর কথা রয়েছে। তবে বড় দেশগুলো এ চুক্তির প্রতি সমর্থন না দিলে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রিতে কমিয়ে আনার কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে বলে আশঙ্কা করেছে ক্রেমলিন।
এদিকে প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার খবরে ‘হতাশা’ প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য। খবর বিবিসি, এএফপি ও দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের।
জলবায়ু চুক্তি নিয়ে নয় পৃষ্ঠার একটি যৌথ খসড়া বিবৃতি প্রকাশ করেছে চীন-ইইউ। ওই খসড়ায় প্যারিস চুক্তি কার্যকরে ‘সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ করেছে দুই পক্ষ।
জলবায়ু চুক্তির বিষয়ে আজ শুক্রবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে এক বৈঠক শেষে এ যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হবে। গত এক বছর ধরে এ ইস্যুতে কাজ করছে চীন ও ইইউর কর্মকর্তারা। দীর্ঘ কূটনৈতিক আলোচনা শেষে তারা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে প্যারিস চুক্তি কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নিতে একমত হয়েছেন।
খসড়া বিবৃতিতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ এবং এর সামাজিক ও রাজনৈতিক অভিঘাত মোকাবেলার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। খসড়ায় আরও বলা হয়, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ধরে রাখবে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে প্যারিস চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক অর্জন’ বলে মনে করছে চীন ও ইইউ।
এ চুক্তি বিশ্বের দেশগুলোর যৌথ রাজনৈতিক ইচ্ছা ও বিশ্বাসের প্রতিফলন, যা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জটিল সমস্যার কার্যকর সমাধানের জন্য নেয়া হয়েছে। তাই এ চুক্তি কার্যকরের বিষয়ে উভয় পক্ষ সর্বোচ্চ রাজনৈতিক গুরুত্ব দিচ্ছে।
এ চুক্তির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমিরি পুতিন প্যারিসে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। দেশটি একে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছে।
তিনি আরও বলেন, একই সঙ্গে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে প্রধান অংশীদাররা না থাকলে এ সম্মেলনের কার্যকারিতা হ্রাস পাবে। ইইউয়ের ক্লাইমেট কমিশনার মিগুয়েল আরিস কান্তে বলেন, ‘প্যারিস চুক্তি কার্যকরে যতই বাধা আসুক না কেন, ইইউ ও চীন একসঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।’
ইইউয়ের জ্যেষ্ঠ আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি এ চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় তবে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে পূর্ণ সমর্থন দেবে ইইউ।’
জলবায়ু চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে পৌঁছেছেন। প্যারিস চুক্তিকে শীর্ষ এজেন্ডা হিসেবে নিয়ে ইইউয়ের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান জ্যঁ ক্লদ জাঙ্কারের সঙ্গে আলোচনা করবেন কেকিয়াং।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ চীনের আন্তর্জাতিক দায়িত্ব। চীন নিজের স্বার্থেই জলবায়ু পরিবর্তন রোধে লড়বে। এ ইস্যুতে অন্য দেশের কাছে দৃষ্টান্ত হতে চায় বেইজিং। প্যারিস চুক্তি কার্যকরে ভূমিকা রাখতে চায়। তবে এ জন্য অন্য দেশের সহযোগিতাও প্রয়োজন।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বুধবার রাতে টুইটারে বলেন, ‘আমি বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১টায়) প্যারিস জলবায়ু চুক্তির বিষয়ে আমার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করব।’ ট্রাম্প টুইট বার্তায় নির্বাচনী প্রচারণাকালে তার জনপ্রিয় স্লোগান ‘আমেরিকাকে আবারও মহান করে তুলুন’ উল্লেখ করেন।
এ চুক্তির বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন সে ব্যাপারে ট্রাম্প কোনো কিছু না জানালেও মার্কিন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, এ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসতে পারে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই জলবায়ুবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন তুলে নেয়ার কথা জোরগলায় বলছেন ট্রাম্প। সে সময় বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে ‘ধাপ্পাবাজি’ বলেও বর্ণনা করেন তিনি।
প্যারিস চুক্তি থেকে সরে আসার খবরে হতাশা প্রকাশ করে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রুড বলেন, ‘এটি হতাশাজনক। কিন্তু আমি আশা করি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আমাদের নিবিড় সম্পর্ককে ব্যবহার করে ট্রাম্পকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করব।’