ছাত্রীর মিষ্টি প্রেম
- আপডেট সময় : ১০:০৭:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৪ ২৪ বার পড়া হয়েছে
–ওই তুই সব সময় স্যারের সাথে এভাবে ব্যবহার করিস কেন। মনে হয় তুই স্যারের প্রেমিকা(নিহা)।
–প্রেমিকা ই ত। আর তুই জানিস না স্যার কে আমি সেই কবে থেকে ভালোবাসি(ইতি)।
–জানব না কেন জানি তো। কিন্তু তুই ডাইরেক্টলি স্যার কে প্রপোজ না করে এভাবে ফাজলামো করিস কেন।
–স্যার ত অনেক ভদ্র, তাই একটু আদটু মজা নিতে আলদা ভালো লাগে।
–মজা নিতে থাক আর যেদিন স্যার বিয়ে করে ফেলবে সেদিন প্রপোজ করিস কেমন।
–ওই চুপ কর, এরকম কিচ্ছু হলে ওই ভদ্র স্যারকে কচি কচি করে কেটে ফেলব।
–সামনে দেখ স্যার ক্লাসে ডুকছেন।
এই বলে ইতি আর নিহা দাঁড়িয়ে যায়।সবার সাথে স্যারকে সম্মান জানায়।
এত সময় কথা হচ্ছিলো ইতি আর নিহার মাঝে। ইতি এই কলেজের প্রিন্সিপালের মেয়ে। দেখতে ও পরী দের মত। জুনিয়র সিনিয়র অনেক ছেলের ক্রাশ হয়ে আছে কিন্তু কাউকে পাত্তা ই দেয় না। আর নিয়ান হচ্ছে এই ভার্সিটির নতুন টিচার। মাসখানিক ধরে সে ইতি দের ভার্সিটিতে ইংলিশ বিষয় টি নিয়ে পড়ায়। দেখতে ও অসম্ভব সুন্দর যাকে হেন্ডাসাম বলে আর কি হিহিহি। নিয়ান যেদিন প্রথম ভার্সিটিতে আসে সেদিন ই অনেক মেয়ে ওর উপর ক্রাশ খায়। কিন্তু ইতি ওদের সবার আগে। আর এদিকে নিয়ানেরর আব্বু ইতির আব্বুর ফ্রেন্ড।তাই নিয়ান ইতি কে ইংলিশ প্রাইভেট ও পড়ায় তবে ওদের বাসায় গিয়ে। এটা নিয়ানের আব্বুর অর্ডার।
এদিকে নিয়ান ক্লাসে ডুকে দেখে ইতি কোন বেঞ্চে বসা। কারণ যদি ইতি সামনে বসে তাহলে নিয়ান কে আর পড়াতে দেয় না।
কিন্তু নিয়ানের ও কপাল খারাপ ইতি সবার আগের বেঞ্চে বসা।
নিয়ান সবাই কে হাই হেলো বলে যেই না ইতির দিকে তাকায়, তখন ই ইতি নিয়ান কে চোখ মারে।
সবার সামনে ইতির চোখ মারা দেখে নিয়ান বিচারা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।
তবে এটা ইতির প্রতিদিনের রুটিনের একটা পার্ট মাত্র।
–হায় আল্লাহ এই ফাজিল ছাত্রী টা মনে হয় আমাকে দুনিয়া থেকে উঠাই তে চাইছে।
নিয়ান মনে মনে কথা গুলো বলে বই টা বের করে পড়াতে লাগে।
সবার দিকে চেয়ে বুঝাতে লাগে আজকের বিষয় টা। তাই ইতির দিকে ও তাকাবে এটা স্বাভাবিক।
নিয়ান যত বার ইতির দিকে তাকায়,দেখে ওই মেয়ে টা তার দিকে হহহহা করে তাকিয়ে থাকে।
নিয়ান দীর্ঘ সময় পার্ট টা বুঝিয়ে সবার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে
–কেউ কি কোন অংশ বুঝতে হিমসিম খাচ্ছো বা একটু ও বুঝো নাই।
যেই না নিয়ান প্রশ্ন টা করল ইতি সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যায়।
–স্যার আমি না কিচ্ছু বুঝি নি। আমাকে কি একটু বুঝিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
–এটা ত স্বাভাবিক সবাই বুঝবে কিন্তু তুমি বুঝবে না। দেখাও কোন টা বুঝো নি।
–স্যার আমি না ট্যাগ কুয়েসশন বুঝি নি।
–তুমি এই ক্লাসের ত (রাগি গলায় বলল)।
–জি স্যার আমি ত আপনার ই স্টুডেন্টস আর এই ক্লাসের ই।
–তাহলে আমি যে এখন ট্যাগ কুয়েসশন পড়াই নি মডিফাই সম্পর্কে আলোচনা করেছি তা কি দেখো নাই।
হায় হায় স্যার কে এমন ভাবে দেখতে লাগলাম কি যে পড়াচ্ছেন তাই খেয়াল করলাম না। এখন বাচি কি করে(ইতি মনে মনে বলল)।
–আসলে হইছে কি স্যার গত কাল রাতে আপনি ত আমায় ট্যাগ কুয়েসশন এর নিয়ম পড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু আমার মাথায় ডুকে নি। তাই এখন যদি একটু বুঝিয়ে দিতেন।
–চুপ একটা কথা ও বলবে না। এটা কি তোমার বাসা যা মন চায় তাই বলবে। বাসার পড়া এখানে টেনে বাকি সবার টাইম নষ্ট কেন করছো। যাও এই ক্লাস থেকে। নেক্সট টাইম এমন হলে ভার্সিটি আসা অফ করে দিব।
–না না স্যার এটা করবেন না। ভার্সিটি তে না আসলে আপনাকে ত আর দেখতে পারব না।
–কি বললে তুমি।
–কই কিছু ত বলি নি।
–আমি শুনেছে এখন কথা না বারিয়ে ক্লাস থেকে বের হও। নাহলে শাস্তি টা আর কড়া হবে।
–বলছিলাম কি স্যার আর এমন হবে না। ক্লাসে থেকে যাই না প্লিজ।
–ওই মেয়ে ওই তোমার সমস্যা কি হে। এমন ভাবে কথা বলছ যেন আমি তোমার স্বামী। যাও ক্লাস থেকে বেরিয়ে।
ইতি বাধ্য হয়ে ক্লাস দিকে বের হতে লাগে। গাল দুটি ফুলিয়ে পুরো লাউ এর মত বানিয়ে ফেলেছে।
মনে হচ্ছে যদি নিয়ান কে সামনে পায় লবণ না দিয়ে ও স্বাদহীন ভাবে খেয়ে ফেলবে।
–ওই বেটা স্যার আমাকে সবার সামনে এত অপামন করার ফল টা কিন্তু ভালো হবে না। তুই বেটা জানিস আমি তর সাথে ফাজলামো করি তাহলে কেন সবার সামনে এভাবে কথা শুনালি। আজ বের হয়ে বাসায় কি ভাবে যাস তা দেখে নিব।
ইতি বিড়বিড় করে কথা গুলো বলছে আর সামনে অগ্রসর হচ্ছে।
ক্লাসে নেই।
শেষমেশ ক্লাস টা করিয়ে বের হয়ে অফিস চলে যায়।
নেহা ক্লাস করে ইতি কে খুঁজতে খুঁজতে বট তলায় চলে আসে।
এসে দেখে ইতি এমন ভাবে বিড়বিড় করছে যেন মুখ টা বন্ধ ই হচ্ছে না।
–ওই তুই এত বকবক করিস কেন হে(নেহা)।
–কেন করি তুই জানিস না। দেখলি না ওই ভদ্র টিচার টা কিভাবে আমায় অপমান করলো।
–এতে স্যারের কি দোষ তুই ত ক্লাসে অমনোযোগী ছিলে তাই বকা দিছে।
–ওই দেখ তুই ওর পক্ষ নিস না কিন্তু না হলে তর ও অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।
–মানে তুই স্যারের অবস্থা খারাপ করতে চাচ্ছিস।
–হুমমম ওই কালো বানর সরি সরি ও ত সুন্দর, ওই সুন্দর বানর, জলহস্তী, লেজ কাটা শিয়াল, হনুমান আর মনে হচ্ছে না, ওই বেটা কে আজ এমন শিক্ষা দিব ইতি কি তা চিনিয়ে ফেলব।
–হায় আল্লাহ তুই স্যারের উপর এত ডিগ্রী দিচ্ছিস কেন। এগুলার আকিকা কি তুই দিবি।
–নেহা মজা করিস না। আজ ওই টিচার কে আমি শিক্ষা দিতে চাই। আর বাসায় পড়ানোর সময় যাতে সরি বলে এর ব্যবস্থা করতে হবে।
–ত আইডিয়া কি কি একটু বলবি ত।
–তকে বলব না। তর গলায় কিছু হজম হয় না। তুই শুধু আমার সাথে চল।
এই বলে ইতি নেহা কে নিয়ে অফিস কক্ষের সামনে যায়।
যখন বুঝতে পারল নিয়ান বের হচ্ছে তখন ইতি এক বালতি পানি দরজার সম্মুখে ঢেলে দেয়।
ইসসসসস আজ ত মনে হয় বেটা শেষ। কোমর নিয়ে যে কদিন বিছানায় থাকে আল্লাহ ই জানে।
কথা টা ভেবে ইতি নিজে নিজেই লুঙ্গি ডান্স দিতে লাগে।
ওই যে বলে না কারো জন্য গর্ত খনন করো না ওই গর্ত তুমি ই যাবে কথা টা পুরাই সঠিক।
ইতি খুশিতে নাচতে নাচতে ওই ফেলা পানির উপর চলে যায়।
পানি থাকায় ফ্লোর টা এত টা ছিলিপ করে ইতি আর দাঁড়াতে ই পারছিল না।
পড়ে যাচ্ছে পড়ে যাচ্ছে এমন অবস্থা কিন্তু বেশি সময় এভাবে থাকতে পারল না ঠাসসসস করে ফ্লোরে পড়ে যায়।
আর ঠিক তখন নিয়ান অফিস থেকে অন্য ক্লাসে যাওয়ার উদ্দেশ্য পা বারায়।
যেই না বাইরে আসল সামনে তাকিয়ে হাসি আর চেপে রাখতে পারল না হুহুহুহু করে হেসে উঠে।
নিয়ানের এরকম হাসির শব্দ শুনে প্রিন্সিপাল সাথে সাথে বেরিয়ে আসেন।
নিজের মেয়ে কে এরকম অবস্থা দেখে অনেক রাগ উঠে মাথায়। নিজেকে শান্ত রেখে বলতে লাগেন
–এটা কি তোমার বাসা যা ইচ্ছে তাই করবে(প্রিন্সিপাল)।
–সরি আব্বু।
–চুপ একদম চুপ।এখানে পানি কে ফেলেছে হে।
–আমি না আব্বু হয়ত অন্য কেউ ফেলেছে আর আমি তা খেয়াল না করে হাটতে গিয়ে ছিলিপ খেয়ে পড়ে যায়।
–না না আংকেল তা মনে হয় না। ওই যে ইতির পিছনে বালতি দেখুন মনে হয় ও ই এই কান্ড করেছে(নিহান)।
–দিল রে আমার বাশ ডুকিয়ে। এসে ছিলাম ওর কোমর টা ঢিলা করতে এখন ত দেখি নিজের কোমর ত গেল সাথে আব্বুর কথা ও শুনতে হচ্ছে। ওই বেটা রে যে আজ কি করব ইসসসড আইডিয়া ও ত ভেবে পাচ্ছি না(ইতি মনে মনে বলল)।
–আমি জানতাম এটা ওর ই কাজ হবে। যত দিন যাচ্ছে তুই তত শয়তান হচ্ছিস। একটু ও কি কেমন সেন্স তৈরি হয় নি।
–আব্বু সরি আর হবে না।
–যদি আর কোন দিন এরকম কোন কান্ড দেখি তাহলে এখানে আসা অফ করে দিব। এখন বাসায় যা তাড়াতাড়ি।
এই বলে তিনি চলে যান।
নিয়ান ত ইতি কে কথা শুনিয়ে হাসতে হাসতে শেষ।
নিহানের হাসি দেখে ইতির রাগ টা উঠা চরম পর্যায়ে উঠে যায়। নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে নিহানের উদ্দেশ্যে এগুতে লাগে।
যেই না পা বারায় আম্মু গো বলে আবার ছিলিপ খেয়ে পড়ে যায়।
নিহান বিচারা হাসি যেন আর থামাতে পারছে না। হেসে হেসে চলে যায় পরের ক্লাস নিতে।
ইতির রাগ টা যেন সপ্তাহ আকাশে উঠা নামা করছে।
কোনমতে ওই খান থেকে কেটে পড়ে। চলে আসে আবার ওই বট তলায়।
–ওই তর কাপড় খারাপ আর তুই বাসায় না গিয়ে এখানে আবার আসলি কেন(নেহা)।
–যতসময় ওই স্যার বেটারর কিচ্ছু করতে পারছি না তত ক্ষণ বাসায় যাব না।
–এখন ও শখ মিটে নি। দেখলি না কিভাবে নিজের প্লানে নিজেই ফেঁসেছিস।
–এখন আর ওইসব প্লান করব না। ওর গাড়ি টার এমন অবস্থা করব যাতে বাসাা যাওয়ার নাম টা ই ভুলে যায়।
–দেখ ইতি বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। যদি এবার ও ধরা পড়িস তাহলে ত তুই শেষ হয়ে যাবি
–না এখন আর শেষ হব না তুই দেখে নিস।
এই বলে ইতি সেই আগের মত নেহাকে নিয়ে চলে আসে নিয়ানের কারের কাছে।
–এখন কি করবি(নেহা)।
–গল্পে, ছবি তে দেখতাম নায়িকা রা নায়কের গাড়ির চাকার বাতাস ছেড়ে দেয়।কিন্তু আমি ওই সব কপি করব না(ইতি)।
–তাহলে কি করবি।
–কি আর নতুন আইডিয়া কাজে লাগাবো।
–যেমন
–যেমন ধর লাঠি দিয়ে ওর গাড়ির সামনের গ্লাস টা ভেঙে চুরচুর করে ফেলব।
–ককককককি
–কি না হে। তুই শুধু দেখ এই ইতি কে বকা খাওয়ানোর ফল।
এই বলে কোথ থেকে একটি হকি স্টিক নিয়ে আসে।
–হাহাহা এই দেখ হকি স্টিক। বিচারা ভদ্র টিচার আজ ত শেষ হয়ে যাবে।
এই বলে ইতি হকি স্টিক দিয়ে গাড়ির গ্লাসে আঘাত করতে লাগে।
হকি স্টিক টা উপরে এনে নিচে যেই না বারি মারবে তখন যেন তার হাতের স্টিক টা নামছেই না।
মনে হচ্ছে কে যেন খুব শক্ত করে ধরে রাখছে।
ইতি বার বার টানতে লাগে কিন্তু উপর থেকে নিচের দিকে নামাতেই পারছে না।
আর কোন উপায় না পেয়ে পিছনে ফিরে দেখে নিয়ান তার হকি স্টিক টা সেই রকম ভাবে ধরে আছে।
বিচারি ইতির অবস্থা ত যায় যায়। ভয়ে মাটির ভিতর ডুকে যাচ্ছে এমন অবস্থা।